26
Feb
2021
বিমার আওতায় আসছে পোশাক শ্রমিকরা

Author: রিয়াদ হোসেন
Media Publisher: ittefaq

তৈরি পোশাক খাতের সব শ্রমিক বিমা সুবিধার আওতায় আসতে যাচ্ছে। ইস্যুটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে সরকারেরও ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। শুরুতে ১ লাখ ৫০ হাজার শ্রমিকের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালু হবে। তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি এ কার্যক্রম সফলভাবে শেষ হওয়ার পর সব গার্মেন্টস কারখানায় তা চালু হবে। আইএলও এবং সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার লক্ষ্যে শিগিগরই সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি হতে যাচ্ছে। এর লক্ষ্য হলো, কেন্দ্রীয়ভাবে তহবিল জোগাড় ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু বা আহত হওয়ার ক্ষেত্রে এ বিমা ব্যবস্থা থেকে তাদের কিংবা পরিবারের সদস্যদের সহায়তা করা। সূত্র জানায়, এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম (ইআইআই) নামে চালু হতে যাওয়া এ বিমায় প্রাথমিক অর্থায়ন আসবে ব্র্যান্ড ও বায়ারদের কাছ থেকে। পুরোদমে চালু হওয়ার পর এ ভার কারখানা মালিকদেরই নিতে হবে। তবে বিমা চালুর বিষয়টি মেনে নিলেও এর অর্থায়নের উত্স নিয়ে দ্বিমত রয়েছে কারখানা মালিকদের। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হক ইত্তেফাককে বলেন, এটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা একটি ইস্যু। আমরা জেনেছি বাংলাদেশ সরকার এই উদ্যোগকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানাতে যাচ্ছে। বিমা স্কিমের এ উদ্যোগে ব্র্যান্ড ও বায়ারদেরও অংশগ্রহণের অনুরোধ আমাদের। একই মনোভাব শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধিদেরও।

জানা গেছে, প্রতিবেশী ভারত ছাড়াও বাংলাদেশের প্রতিযোগী অনেক দেশেই কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত কিংবা আহত হওয়া শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সুরক্ষায় এ ধরনের বিমা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। একেক দেশে একেক নামে থাকলেও এসব বিমার অর্থায়ন ও তদারকি কেন্দ্রীয়ভাবেই হয়ে থাকে। এর অর্থায়নও সাধারণত কারখানা মালিকপক্ষই করে থাকেন। বাংলাদেশেও রানা প্লাজা ও তাজরীনের মতো দুর্ঘটনার পর এ ইস্যুটি সামনে চলে আসে। তখন দেখা গেল, বেশির ভাগ শ্রমিকই বিমার আওতায় নেই। আবার বিমা দাবির অর্থ পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা রকম জটিলতা দেখা গেল। সূত্র জানায়, আইএলওর এ উদ্যোগও কেন্দ্রীয়ভাবে অর্থায়ন ও তদারকির পক্ষে। হিসাব করে দেখা গেছে, এ বিমা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হলে ব্যয় হবে রপ্তানির ০.০১৯ শতাংশ অর্থ বা প্রতি ১০০ টাকায় প্রায় দুই পয়সা।
দেশে বর্তমানে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা রপ্তানি মূল্যের ওপর ০.০৩ শতাংশ হারে সরকারের কেন্দ্রীয় তহবিলে অর্থ প্রদান করছে। এই অর্থ থেকে নিহত শ্রমিকের পরিবারকে তিন লাখ টাকা করে দেওয়া হয়। অন্যদিকে দেশের শ্রম আইন অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে নিহত হওয়ার ক্ষেত্রে শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ ২ লাখ ও কর্মক্ষমহীন হওয়ার মতো আহত হলে আড়াই লাখ টাকা পায়। বর্তমান বাস্তবতা ও আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, এই অর্থ খুবই অপ্রতুল। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত একজন শ্রমিক প্রতিনিধি ইত্তেফাককে বলেন, এটি বাস্তবায়ন হলে শ্রমিকরা অপেক্ষাকৃত ভালো অঙ্কের আর্থিক সুবিধা পাবেন।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আব্দুস সালাম ইত্তেফাককে বলেন, ইস্যুটি নিয়ে আইএলওর সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে এখানে কার অংশগ্রহণ কেমন হবে, তা আলোচনায় আসা দরকার। মালিকপক্ষের সঙ্গেও বসতে হবে। শ্রমিক নেতা রাজেকুজ্জামান রতন ইত্তেফাককে বলেন, শিল্প দুর্ঘটনার কারণে বাংলাদেশে এ ধরনের বিমা চালু করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশে সাধারণত মালিকপক্ষই এর ব্যয়ভার বহন করে। তবে আমাদের বাস্তবতায় কারখানা মালিকের পাশাপাশি সরকার ও বায়ারদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

26 Feb 2021
On behalf of
Implemented by

© Project Shurokkha