News
Mar
2021
পোশাক শ্রমিকরা বীমা সুবিধায় আসছেন
Author: হাসান সোহেল (Hasan Sohel)
Media Publisher: Inqilab
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের শীর্ষ খাত পোশাক রফতানি খাত। দেশের রফতানি আয়ের ৮০ ভাগের বেশি আসে তৈরি পোশাক থেকে। আর এ রফতানি আয়ের অন্যতম যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেন প্রায় ৪২ লাখ শ্রমিক। এর মধ্যে নারী কর্মীই বেশি। যাদের ৪৩ ভাগ গার্মেন্টস শ্রমিক বছরে নানা অসুখে ভোগেন। কিন্তু মোট শ্রমিকদের মাত্র ১ ভাগ আছেন স্বাস্থ্য বীমার আওতায়। বাকি ৯৯ ভাগই স্বাস্থ্য বীমার সুযোগ পাচ্ছেন না। শতকরা ৪০ জন শ্রমিক স্বাস্থ্যসেবার উচ্চমূল্যের জন্য যথাযথ সময়ে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারেন না। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য বীমার সুবিধায় আছেন মাত্র ৩৫টি কারখানার ৫৮ হাজার ২৬১ জন শ্রমিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় এই চিত্র উঠে এসেছে।
বাংলাদেশে রানা প্লাজা ও তাজরীনের মতো দুর্ঘটনার পর শ্রমিকদের বীমার ইস্যুটি সামনে আসে। কারণ, তখন বেশিরভাগ শ্রমিক বীমার আওতায় ছিল না। যদিও এবার পোশাক শ্রমিকদের বীমার আওতায় আনার জন্য কিছুটা সুখবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে সরকার। আর তাই অবশেষে এ খাতের সব শ্রমিক পর্যায়ক্রমে বীমা সুবিধার আওতায় আসছে। এ লক্ষ্যে পরীক্ষামূলকভাবে দেড় লাখ শ্রমিককে বীমা সুবিধা দিতে সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি হতে যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেছেন, দীর্ঘ মেয়াদে এবং বড় পরিসরে টেকসই উপায়ে এই বীমা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এ জন্য ক্রেতা প্রতিষ্ঠান, মালিক, শ্রমিক এবং সরকারকে প্রিমিয়াম প্রদানে অংশগ্রহণ করতে হবে।
তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের নিয়ে গবেষণার বিষয়ে প্রফেসর ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, তৈরি পোশাক শিল্প বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান সম্ভাবনাময় এক খাত। একে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে প্রায় ৪২ লাখ মানুষের, বিশেষত নারীদের কর্মসংস্থানের বিশাল এক বাজার। অথচ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছরে শতকরা ৪৩ ভাগ শ্রমিক বিভিন্ন অসুখে ভুগে থাকেন। অসুস্থতাজনিত অনুপস্থিতির কারণে গড়ে ৪ দিনের বেতন তাদের হারাতে হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পোশাক শ্রমিকদের বীমার আওতায় আনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে সরকার। এ লক্ষ্যে শুরুতে পরীক্ষামূলকভাবে এক লাখ ৫০ হাজার শ্রমিককে বীমাসুবিধার আওতায় আনা হবে। তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি এ কার্যক্রম সফলভাবে শেষ হলে সব পোশাক কারখানায় এটি চালু হবে।
আইএলও ও সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, পোশাক শ্রমিকদের বীমার আওতায় আনতে সরকারের সঙ্গে শিগগিরই একটি চুক্তি হতে যাচ্ছে। এর লক্ষ্য হলো কেন্দ্রীয়ভাবে তহবিল সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু বা আহত হওয়ার ক্ষেত্রে এ বীমা ব্যবস্থা থেকে তাদের কিংবা পরিবারের সদস্যদের সাহায্য করা।
সূত্র জানায়, এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম (ইআইআই) নামে চালু হওয়া বীমার প্রাথমিক অর্থ ব্র্যান্ড ও বায়ারদের কাছ থেকে আসবে। পুরোদমে চালুর পর এটির দায়িত্ব কারখানা মালিকদের নিতে হবে। আইএলও সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের দুর্ঘটনাজনিত বীমা সুবিধাটা কি এবং এটা করলে এর উপকারিতা নিয়ে ক্রেতা, মালিক, শ্রমিক ও সরকারসহ সকল মহলের পরামর্শ বা সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে তারা। যা চলমান রয়েছে।
শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্রের তথ্যানুযায়ী, শ্রমিকদের বীমাব্যবস্থা বাস্তবায়ন হলে ব্যয় হবে রফতানির শূন্য দশমিক ০১৯ শতাংশ বা প্রতি ১০০ টাকায় প্রায় দুই পয়সা। আর দেশে বর্তমানে তৈরি পোশাক রফতানিকারকরা রফতানি মূল্যের ওপর শূন্য দশমিক ০৩ শতাংশ হারে সরকারের কেন্দ্রীয় তহবিলে টাকা জমা দিচ্ছেন। দেশের শ্রম আইন অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে নিহত হলে শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ দুই লাখ এবং কর্মহীন হওয়ার মতো আহত হলে আড়াই লাখ টাকা পান। বর্তমান বাস্তবতা ও আইএলও এর মানদন্ড অনুযায়ী, এ টাকা খুবই অপ্রতুল।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, শ্রমিকদের বীমা দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা একটি ইস্যু। বীমা স্কিমের এ উদ্যোগে ব্র্যান্ড ও বায়ারদেরও অংশগ্রহণের অনুরোধ আমাদের। একই মনোভাব শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিদেরও।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৪০ ভাগ শ্রমিক স্বাস্থ্যসেবার উচ্চমূল্যের জন্য যথাযথ সময়ে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারেন না। তৈরি পোশাক শ্রমিকদের যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্থা এবং এনজিও দীর্ঘদিন ধরে ‘তৈরি পোশাক শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা’ নামক পাইলট প্রোগ্রাম পরিচালনা করে আসছে। যেগুলোর অধিকাংশের সময়সীমা প্রায় শেষের দিকে। তাই তৈরি পোশাক শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে বড় পরিসরে তাদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য এসএনভি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের একটি দল গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
গবেষক দল বলছে, দীর্ঘ মেয়াদে এবং বড় পরিসরে টেকসই উপায়ে এই বীমা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শ্রমিক, মালিক এবং সরকারকে প্রিমিয়াম প্রদানে অংশগ্রহণ করতে হবে। প্রাথমিক হিসাব মতে, তৈরি পোশাক শ্রমিকদের একটা উপযুক্ত সুবিধা প্যাকেজ এর আওতায় আনতে হলে বছরে প্রায় প্রতিজনের এক হাজার টাকা প্রিমিয়াম প্রয়োজন হবে। উল্লিখিত প্রিমিয়ামের ৩৬৫ টাকা শ্রমিক, ৩৬৫ টাকা মালিক এবং বাকি ২৭০ টাকা সরকার বহন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পের সব শ্রমিকের (৪২ লাখ) পর্যায়ক্রমে আগামী ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়। সরকার যদি স্বাস্থ্য বাজেট থেকে বছরে শ্রমিক প্রতি ২৭০ টাকা খরচ করে তাহলে ১ম (১০ লাখ শ্রমিক), ২য় (২০ লাখ শ্রমিক), ৩য় (৩০ লাখ শ্রমিক) এবং ৪র্থ বছরে (৪০ লাখ শ্রমিক) যথাক্রমে সরকারের স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র শূন্য দশমিক শ‚ন্য ৮ শতাংশ, শ‚ন্য দশমিক ১৫ শতাংশ, শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ এবং শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ খরচ হবে। যা কিনা খুবই সামান্য। গবেষকরা আরো বলেন, ‘বীমা তহবিল ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান’ গঠনের মাধ্যমে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য প্রচলিত পাইলট স্বাস্থ্য বীমা স্কিমকে সমন্বিত করে পর্যায়ক্রমে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের বীমার আওতায় আনার উদ্যোগ শুরু করা এখনই প্রয়োজন। এ বিষয়ে নীতি নির্ধারণে সর্বমহলের কার্যকরী অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।
সার্বিক বিষয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আব্দুস সালাম বলেন, পোশাক শ্রমিকদের বীমার ইস্যুটি নিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে। এখানে কার, কত শতাংশ ভ‚মিকা থাকবে তা নির্ধারণ করতে আলোচনা দরকার। এজন্য পোশাক কারখানার মালিকদের সঙ্গেও আলোচনা করতে হবে।
Fast Retailing backs ILO project in Bangladesh
28 Jun 2022
ILO launches pilot employment injury scheme
23 Jun 2022
Injury insurance scheme for RMG workers launched
22 Jun 2022
জুলাইয়ে পোশাক শ্রমিকদের এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম
09 Jun 2022
গোলটেবিল ক্রোড়পত্র: শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তা
25 Mar 2022
No compensation for most workplace deaths
26 Aug 2021
অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিশীল
10 Aug 2021
শ্রমিক সুরক্ষায় প্রয়োজন সামাজিক বীমা
28 Apr 2021
শ্রমিকের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে
28 Apr 2021
শিল্প দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের স্থায়ী কাঠামো কত দূর
24 Apr 2021
Compensation eludes workplace deaths
11 Apr 2021
দেড় লাখ পোশাক শ্রমিক বীমার আওতায় আসছে
23 Mar 2021
বীমার আওতায় আসছেন দেড় লাখ শ্রমিক
26 Feb 2021
বিমার আওতায় আসছে পোশাক শ্রমিকরা
26 Feb 2021
শ্রমিকের মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে
23 Dec 2020
On behalf of
Implemented by
© Project Shurokkha