News
Apr
2021
শিল্প দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের স্থায়ী কাঠামো কত দূর
Author: এম সায়েম টিপু (M. Saim Tipu)
Media Publisher: Kalerkontho
‘জীবন এমন ভয়ংকর আর বিভীষিকাময় হবে, কোনো দিন ভাবতে পারিনি; শরীরের যন্ত্রণা আর অভাব জীবনটাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। খোদা যদি একেবারে নিয়ে যেতেন তাহলেই বেঁচে যেতাম। ’ রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির আট বছর পরে আহত আমেনা বেগম এমন বিষাদের কথা বলছিলেন। তিনি কাজ করতেন ওই ভবনের ফেন্টম অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানায়।
ভবন ধসে মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে অচল হয়ে পড়া মো. সোলায়মান বলছিলেন, ‘প্রথম দিকে এনাম মেডিক্যাল ও সিআরপিতে চিকিৎসা নেওয়ার পর আর চিকিৎসা নিতে পারিনি।
ক্ষতিপূরণ হিসেবে যা পেয়েছি তা দিয়ে কোনো রকমে চিকিৎসা করিয়ে, পরিবারের জন্য খরচ করে সবই শেষ। তারপর ধারদেনা করে চলছে। ওই সময় সরকার ও মালিকরা স্থায়ী চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউ এখন খবর রাখে না। ’ সোলায়মান কাজ করতেন রানা প্লাজার নিউ ওয়েভ স্টাইল নামের পোশাক কারখানায়।
এমন অবস্থার মধ্যে আজ ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের শিল্প খাতের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডির আট বছর পূর্ণ হচ্ছে। ২০১৩ সালের এই দিনে রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভারে রানা প্লাজা নামের বহুতল ভবন ধসে এক হাজার ১৩৭ জন নিহত এবং দুই হাজার ৪৩৮ জন আহত হন। তাঁদের বেশির ভাগই ওই ভবনের বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিক।
দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন মহল থেকে তাঁরা দান-অনুদান পেয়েছিলেন। রানা প্লাজা ট্রাস্ট তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণও পেয়েছেন। আহতদের বেশির ভাগ শ্রমিকই এখন নানা শারীরিক ও মানসিক জটিলতায় ভুগছেন। দুর্ঘটনার পর যে টাকা তাঁরা পেয়েছিলেন সেটা দীর্ঘদিন ধরে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট নয়।
ওই দুর্ঘটনার পর শ্রমিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ বিষয়ে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। রিট করে কয়েকটি সংগঠন। কিন্তু সেই আইনি প্রক্রিয়া থেমে আছে। শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে—এমন বিভিন্ন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠন শিল্প দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণে স্থায়ী কাঠামো করার প্রস্তাব দিলেও সেটা এখনো হয়নি। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে দুই লাখ এবং স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে আড়াই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, যা বতর্মান আর্থ-সামাজিক অবস্থায় মোটেও পর্যাপ্ত নয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও ১২১ কনভেনশন অনুসারে নিহত ও স্থায়ীভাবে অক্ষম শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ হওয়া উচিত আজীবন আয়ের সমপরিমাণ। এই দাবির সঙ্গে একটি জাতীয় তহবিল এবং শ্রমিকদের বীমার আওতায় আনার কথা বলছেন তাঁরা। ক্ষতিপূরণের স্থায়ী কাঠামো করে সেটা শ্রমিক, মালিক ও সরকারের ত্রিপক্ষীয় প্রতিনিধির মাধ্যমে পরিচালনার প্রস্তাবও দিয়েছেন তাঁরা। এতে ক্ষতিপূরণের সামর্থ্য নেই—এমন মালিকদের ওপরও চাপ কমবে।
জানতে চাইলে শ্রমসচিব কে এম আব্দুস সালাম কালের কণ্ঠকে বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর শ্রম আইন সংশোধন করে ক্ষতিপূরণ দ্বিগুণ করা হয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে সেটা আবারও পর্যালোচনা বা সংশোধন করা যেতে পারে। তবে ক্ষতিপূরণের স্থায়ী কাঠামো বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব সরকারের কাছে নেই।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিভিন্ন দুর্ঘটনায় বছরে গড়ে এক হাজার শ্রমিক মারা যায়। এই শ্রমিকদের আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর মতো জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা তহবিলে আওতায় আনা গেলে রানা প্লাজার মতো চিত্র দেখতে হতো না। ’ একটি পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, একজন পোশাক শ্রমিকের মূল বেতন পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা। এর ১ শতাংশ হয় মাসে ৫৩ টাকা। এখানে যদি প্রতি মাসে মালিক ও সরকার ১ শতাংশ করে জমা দেয় তাহলে ১০০ টাকা হয়। বলা হয়, দেশে ৪০ লাখ শ্রমিক আছে। একজন শ্রমিকের জন্য মাসে ১০০ টাকা হলে মাসে মোট ৪০ কোটি টাকা হয়। বছরে হবে ৪৮০ কোটি টাকা। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ন্যূনতম ১৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বিবেচনা করা হয়। এটা যদি ১৫ লাখ টাকাও ধরা হয়। বছরে যদি এক হাজার শ্রমিক দুর্ঘটনায় আহত বা জীবন হারায়, তাদের জন্য ১৫০ কোটি হলেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব। ’ মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়াসহ বিভিন্ন দেশে এ ধরনের সুরক্ষা তহবিল রয়েছে বলে জানান রাজেকুজ্জামান রতন।
আইনে পরিবর্তন আনা জরুরি উল্লেখ করে সলিডারিটি সেন্টার বাংলাদেশের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর এ কে এম নাসিম কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ক্ষতিপূরণের একটি মানদণ্ড ঠিক হওয়া উচিত। এতে ক্ষতিগ্রস্তের জীবন মান বিবেচনায় নেওয়াসহ দেশের মূল্যস্ফীতিও বিবেচনায় নিতে হবে। সেটা দুই থেকে পাঁচ বছর পর পর পর্যালোচানা করা যেতে পারে।
শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ ‘জানো বাংলাদেশ’-এর সমন্বয়কারী তাকবির হুদা কালের কণ্ঠকে বলেন, ক্ষতিপূরণের পরিমাণ শ্রমিক বা তাঁর পরিবারের ব্যক্তিগত ক্ষতি অনুযায়ী নির্ধারণ করা উচিত।
তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, শ্রম আইনে বর্তমানে যা আছে তা অপর্যাপ্ত হলেও আইন অনুসারে এই ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হয়। এটা অনেক সময় আইনের বেঁধে দেওয়া পরিমাণের চেয়েও অনেক বেশি। অনেক কারখানার মালিক এটাও দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন না। তিনি বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা তহবিল এবং আইএলওর বীমা প্রকল্প নিয়ে আমরা কাজ করব। এ জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। ’
আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশের সাবেক সাধারণ সম্পদক তৌহিদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রানা প্লাজা ট্রাস্ট তহবিলের কারণে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পেয়েছিল। কিন্তু যারা স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ববরণ করেছে সরকার, মালিক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের চিকিৎসা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মমুখী করার অঙ্গীকার করলেও সেই কথা রাখেনি। ’
Fast Retailing backs ILO project in Bangladesh
28 Jun 2022
ILO launches pilot employment injury scheme
23 Jun 2022
Injury insurance scheme for RMG workers launched
22 Jun 2022
জুলাইয়ে পোশাক শ্রমিকদের এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম
09 Jun 2022
গোলটেবিল ক্রোড়পত্র: শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তা
25 Mar 2022
No compensation for most workplace deaths
26 Aug 2021
অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিশীল
10 Aug 2021
শ্রমিক সুরক্ষায় প্রয়োজন সামাজিক বীমা
28 Apr 2021
শ্রমিকের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে
28 Apr 2021
Compensation eludes workplace deaths
11 Apr 2021
পোশাক শ্রমিকরা বীমা সুবিধায় আসছেন
27 Mar 2021
দেড় লাখ পোশাক শ্রমিক বীমার আওতায় আসছে
23 Mar 2021
বীমার আওতায় আসছেন দেড় লাখ শ্রমিক
26 Feb 2021
বিমার আওতায় আসছে পোশাক শ্রমিকরা
26 Feb 2021
শ্রমিকের মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে
23 Dec 2020
On behalf of
Implemented by
© Project Shurokkha