News
Mar
2022
গোলটেবিল বৈঠক: শ্রমিক সুরক্ষায় চাই শক্তিশালী কাঠামো
Author: নিজস্ব প্রতিবেদক
Media Publisher: প্রথম আলো
দেশের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাতে শ্রমিকদের সামাজিক ও আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শক্তিশালী কাঠামো প্রয়োজন বলে অভিমত দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। এ সময় তৈরি পোশাকশিল্পসহ সব খাতের শ্রমিকদের জন্য গ্রহণযোগ্য তথ্যভান্ডার তৈরিতে গুরুত্বারোপ করেন তাঁরা।
জার্মানিভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড বাংলাদেশ ও প্রথম আলো আয়োজিত ‘শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এই অভিমত দেন। অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিল লাউডেস ফাউন্ডেশন। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুজিবুল হক বলেন, এখনই শক্তিশালী কর্তৃপক্ষ গড়ে শ্রমিকদের হিসাবের আওতায় আনতে হবে। জরিপ করে জানা দরকার, কোথায় কত শ্রমিক নিয়োজিত। এরপর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। শিক্ষিত বেকারদের নিয়ে কাজ করতে হবে। শুধু শ্রমিকদের জন্য নয়, শিক্ষিত এসব লাখ লাখ বেকারকে নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে ভাবতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, জনকল্যাণে সরকারের যে ১৫০টির অধিক কর্মসূচি চালু আছে, তার পরিবর্তে ৫ থেকে ৭টি শক্তিশালী কর্মসূচি চালু করা গেলে ভালো। তখন অপচয় কমবে। একাধিক কর্মসূচি থেকে সুবিধা নেওয়ার সংখ্যাও কমবে। একসঙ্গে অনেক মন্ত্রণালয়কে সামাজিক পদক্ষেপে যুক্ত হওয়ার দরকার নেই। তিনি আরও বলেন, দেশে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সুরক্ষিত পেনশনের ব্যবস্থা চালু আছে। বেসরকারি খাতে যেটা খুবই সামান্য। সেটা বাস্তবায়নেও অনেক সমস্যা দেখা যায়।
“শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি।”
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রধান কারিগরি উপদেষ্টা সৈয়দ সাদ হোসেন গিলানী বলেন, আইএলও শ্রমিকদের সুরক্ষা দিতে শুরু থেকেই বলে আসছে, শ্রমিকেরা পণ্য নয়। সুতরাং, শ্রমিকদের সব সময় মানুষ ভেবেই কাজে নিয়োগ করতে হবে। তাঁদের সঙ্গে যুক্তিপূর্ণ আচরণ হতে হবে। তবে শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। শ্রমিকদের জন্য ব্যয় সরকারকেই করতে হবে।
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, শ্রমিকের অধিকার নিয়ে কথা বলতে গেলে আমরা সব সময় রপ্তানিমুখী পোশাক খাতের শ্রমিকদের প্রসঙ্গ আনি। কিন্তু পোশাকশিল্পের বাইরেও আনুষ্ঠানিক–অনানুষ্ঠানিক খাতে অনেক শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের সুরক্ষায় মালিকদের পাশাপাশি সরকারের দায়িত্ব বেশি। সরকারি কর্মসূচির অধিকাংশই অতিদরিদ্রদের সুরক্ষার জন্য। সরাসরি শ্রমিকদের জন্য কম। এখন শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান বলেন, শ্রমিক উৎপাদন করে সমাজের জন্য, কিন্তু যখন তিনি আহত হন, সেটির দায়ভার তখন শুধু তাঁর। সমাজ তখন তাঁর কোনো দায়িত্ব নেয় না। তখন ওই পরিবারটির জন্য বিষয়টি মর্মান্তিক হয়ে ওঠে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশে শিল্প খাতে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকদের যে সুরক্ষা কাঠামো, তা আমাদের নেই। আহত হলে ক্ষতিপূরণসহ মাতৃত্বকালীন কাজের নিরাপত্তা, অসুস্থতার সময়ে নানামুখী চ্যালেঞ্জ ও বেকারত্বের সময় আয় সুরক্ষা দিতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় বেকারত্বকালীন সুবিধা প্রাপ্তি এবং আহত অবস্থায় সুরক্ষা নিশ্চিতের দিক থেকে আমরা বেশ পিছিয়ে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) পরিচালক কোহিনুর মাহমুদ বলেন, আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত সব শ্রমিককে সামাজিক সুরক্ষাসহ নারী শ্রমিকের মাতৃত্বকালীন সুরক্ষা ভাতার পরিমাণ বাড়াতে হবে। এসব ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি কার্যকর করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, দেশের বেশ কয়েক হাজার শ্রমিককে স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আনা হয়েছিল। তবে এর পরের ধাপের কাজে আর গতি পেল না। এ জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসার দরকার ছিল। তবে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কাঠামো না থাকায়, সেটা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের গবেষণা পরিচালক সায়েমা হক বিদিশা বলেন, আমাদের দেশে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা তুলনামূলক বেশি। তবে সেটিও পর্যাপ্ত নয়। তাহলে অন্য খাতের শ্রমিকদের কী অবস্থা তা সহজেই অনুমান করা যায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য শ্রমিকদের সুনির্দিষ্ট সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।
একশনএইড বাংলাদেশের উইমেন রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার ইকুইটি ব্যবস্থাপক মরিয়ম নেছা বলেন, সমাজের পুরুষ সদস্য কোনোভাবে চাকরি হারালে তাঁদের জন্য দ্রুত আরেকটি চাকরির ব্যবস্থা হলেও নারীদের ক্ষেত্রে সেটি হয় না। বৈষম্যেও হলেও মুখ খুলতে পারেন না নারী শ্রমিকেরা। দিনের পর দিন এই চাপ মাথায় নিয়ে তাঁদের কাজ করতে হয়। কর্মক্ষেত্রসহ সব জায়গায় নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ পরিহারের আহ্বান জানান তিনি।
গোলটেবিল আলোচনায় সূচনা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আইএলও ইআইআই প্রকল্পের জাতীয় সমন্বয়ক নওশিন শাফিনাজ শাহ, জিআইজেড সুরক্ষা প্রকল্পের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার আসাদুজ্জামান মোহাম্মদ ও মুবারা মোরশেদ। অনুষ্ঠান শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জিআইজেড বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ কারিগরি উপদেষ্টা ফিরোজ আলম। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।
Fast Retailing backs ILO project in Bangladesh
28 Jun 2022
ILO launches pilot employment injury scheme
23 Jun 2022
Injury insurance scheme for RMG workers launched
22 Jun 2022
জুলাইয়ে পোশাক শ্রমিকদের এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম
09 Jun 2022
গোলটেবিল ক্রোড়পত্র: শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তা
25 Mar 2022
No compensation for most workplace deaths
26 Aug 2021
অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিশীল
10 Aug 2021
শ্রমিক সুরক্ষায় প্রয়োজন সামাজিক বীমা
28 Apr 2021
শ্রমিকের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে
28 Apr 2021
শিল্প দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের স্থায়ী কাঠামো কত দূর
24 Apr 2021
Compensation eludes workplace deaths
11 Apr 2021
পোশাক শ্রমিকরা বীমা সুবিধায় আসছেন
27 Mar 2021
দেড় লাখ পোশাক শ্রমিক বীমার আওতায় আসছে
23 Mar 2021
বীমার আওতায় আসছেন দেড় লাখ শ্রমিক
26 Feb 2021
বিমার আওতায় আসছে পোশাক শ্রমিকরা
26 Feb 2021
শ্রমিকের মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে
23 Dec 2020
On behalf of
Implemented by
© Project Shurokkha